মীর প্লাবন লাভলু-নিজস্ব প্রতিবেদক
জামালপুর জেলার অন্যতম পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র দেওয়ানগঞ্জ বাজার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে। সম্প্রতি চুরি ও ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বাজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির পাশাপাশি বাজারের মালিক সমিতির নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির দায়িত্বহীনতা:দেওয়ানগঞ্জ বাজার মালিক সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে। সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন কাঁচামাল ব্যবসায়ী উমর ফারুক। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ১৫ বছর, কিন্তু আর কোনো নির্বাচন হয়নি। অনেক দোকানদারের অভিযোগ, প্রথমদিকে কমিটি কিছুটা সক্রিয় থাকলেও এখন তা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি এখনো দায়িত্ব পালন করছে, অথচ বাজারের নিরাপত্তা, পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা রক্ষায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না।বাজারজুড়ে নিরাপত্তা শঙ্কা:বাজারের অনেক দোকানদার অভিযোগ করছেন, আমরা যে মাসিক চাঁদা দেই এই টাকা যাই কই – বাজার এলাকায় নেই পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, নাইট গার্ডের সংখ্যাও অপ্রতুল। রাতের বেলায় দোকানে তালা ভেঙে ও চালের টিন কেটে অভিনব কায়দা চুরির ঘটনা ঘটছে প্রায় নিয়মিত।ফারিয়া ইলেকট্রিক এর মালিক তারেক বাবু বলেন,”এই মাসেই আমার দোকানে চুরি হয়েছে। নগদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন, সিমকার্ডসহ বেশ কিছু ইলেকট্রিক সামগ্রী । মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক জানার পরও দেখতেও আসেননি, শান্তনা তো দূরের কথা।” পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্বানীয় কিছু ছিনতাইকারী কে গ্রেফতার করা হয় । উপস্থিতি ও মনিটরিংয়ের ঘাটতি:অনেক দোকানদার জানান, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে বাজারে কোন দোকানদার মালিকদের সাথে সাক্ষাত করেন না । কোনো দুর্যোগ বা সমস্যা হলে তারা পাশে থাকেন না। একজন সিনিয়র ব্যবসায়ীর ভাষায়:“কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৫ বছর আগে। তারা কেন এখনো ক্ষমতায়? বাজারে এত অনিয়ম, অথচ কেউ কিছু বলছে না। নতুন নির্বাচন ছাড়া কোনো সমাধান নেই।”ব্যবসায়ীদের দাবিসমূহ:বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দোকান মালিকরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির কথা তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, অবিলম্বে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি:বাজারজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন,পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ,বাজার মালিক সমিতির দ্রুত পুনর্গঠন ও নির্বাচন,রাত্রিকালীন নিরাপত্তা টহল চালু। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি:ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বর্তমান অবস্থায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। তারা অবিলম্বে স্বচ্ছ নির্বাচন ও জবাবদিহিতামূলক মালিক সমিতি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।দেওয়ানগঞ্জ বাজার আজ আর শুধু একটি কেনাকাটার জায়গা নয়—এটি হাজারো পরিবারের জীবিকার কেন্দ্রবিন্দু। তাই ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। বাজারে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে পুরো ব্যবসায়ী সমাজ।